আজকের নিবন্ধে আপনারা জানবেন চন্দ্রযান 3 বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে ও Chandrayaan 3 live Update এবং live location সম্পর্কে জানবেন। এছাড়ও জানবেন চন্দ্রযান 3 লঞ্চ ডেট ও চন্দ্রজান 3 চাঁদে যেতে কত সময় লাগবে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত ভাবে জানবেন।
চন্দ্রযান 3 তে বিক্রম নামে একটি ল্যান্ডার রয়েছে এছাড়ও চন্দ্রযান 2 এর মতো প্রজ্ঞান নামে একটি রোভার রয়েছে, কিন্তু এগুলির মধ্যে কোনও অরবিটার নেই। চন্দ্রযান 3 স্যাটেলাইটের মতো ব্য়াবহার করে। চন্দ্রযান 3 প্রপালসন মডিউল ল্যান্ডার ব্য়াবহার করে এবং রোভার কনফিগারেসন বহন করে যতক্ষণ না মহাকাশযানটি 100 কিলোমিটার চন্দ্র কক্ষপথে থাকে।
চন্দ্রযান 3 বিস্তারিত - Chandrayaan 3 Update Live Location Today:
চন্দ্রযান 3 কিভাবে রিসার্চ করবে ও সেখানকার ফটো কিভাবে পৃথিবীতে পাঠাবে?
চন্দ্রযান 3 মিশনটি একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় নয় এটি কিন্তু একটি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। কারণ চাঁদের বুকে সফট লান্ডিং করানো মঙ্গলের বুকে সফট লান্ডিং করানোর থেকে অনেক কঠিন। মঙ্গলে কোনও একটি Space Craft পাঠাতে সময় লাগে 7 মাস সেখানে চাঁদে একটি Space Craft পাঠাতে সময় লাগে 3 দিন। সুতরাং চাঁদে Space Craft পাঠানোর সময় Space Craft টি যদি তার কক্ষ পথ থেকে একটু সরে যায় তাহলে তাকে সেই কক্ষ পথে আনা খুবই কঠিন। কারণ চাঁদের ক্ষত্রে সময় খুবই কম তাই তাকে সঠিক স্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
শুধু কক্ষ পথই শেষ নয়, চন্দ্রযানটি যখন চাঁদের কাছে আসবে তখন চাঁদের মধ্যআকর্ষণ শক্তি Space Craft টিকে চাঁদের দিকে আকর্ষণ করবে। এই সময় চন্দ্রযানটিকে যদি কোনও একটি গতি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে রাখার জন্য চন্দ্রযানে লাগানো থাকে Thurster নামক যন্ত্র লাগানো হয় , নয়তো চন্দ্রযানটি চাঁদের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়বে।
Thurster কী?
Thurster হল এমন একটি যন্ত্র যার জন্য চন্দ্রযানটি চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে থাকে। অর্থাৎ চন্দ্রযানটি যখন চাঁদের মাটিতে ল্যান্ড করবে তখন চন্দ্রযানটি যেন চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে চাঁদের মাটিতে মুখথুবড়ে না পড়ে সেই জন্য Thurster এর পিছুন দিয়ে আগুন বেরিয়ে চন্দ্রযানটিকে অপরের দিকে চাপ সৃষ্টি করে থাকবে। ফলে চন্দ্রযানটিকে চাঁদের মাটিতে ধীরে ধীরে সফট লান্ডিং করানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ Thurster চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে সম্পর্ন রূপে ব্যালান্স করবে এবং ধীরে ধীরে সফট লান্ডিং করবে।
সফট লান্ডিং করানোর জন্য Parasute ব্য়াবহার না করে Thurster করা হয় কেন?
চন্দ্রযান 3 ল্যান্ড করার সময় কী কী সমস্যার সন্মুখীন হতে পারে?
* Thurstar এর জন্য সমস্যা:- চন্দ্রযান 3 যখন চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে তখন হেবি পাওয়ারফুল এই Thurstar এর পিছুন দিক থেকে প্রচন্ড পরিমাণে বাযু ও আগুন ছাড়বে যার কারণে চাঁদপৃষ্ট থেকে ধুলোবালি উড়ে চন্দ্রযানের প্রতিটা সেনসারকে নষ্ট করে দিতে পরে।
* লান্ডিং স্পেস এর জন্য সমস্যা:- চাঁদের মাটি সমতল না থাকার কারণে সেখানে লান্ডিং করানো খুবই কঠিন। চন্দ্রযান 3 চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করবে সেখানে ঘন অন্ধকার এবং সেখানে অনেক বড় বড় গর্ত রয়েছে ও সেখান কার তাপমাত্রা - 230 ডিগ্রি C রয়েছে যার কারণে ল্যান্ডিং এর জন্য সঠিক স্থান খুজে পাওয়া খুব কঠিন।
* তাপমাত্রার জন্য সমস্যা:- চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যেখানে সূর্যের আলো পাইনা ফলে সেখানকার তাপমাত্রা সর্বদা - 230 ডিগ্রি C হয়ে থাকে। দক্ষিণ মেরুতে অনেক কম তাপমাত্রা থাকার কারণে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আশা চন্দ্রযান 3 স্পেস ক্রাফ্ট টি গরম হয়ে থাকে। ফলে যখন চন্দ্রযান 3 স্পেস ক্রাফ্ট টি চাঁদের - 230 তাপমাত্রায় আসে তখন সেই ল্যান্ডারটি ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে।
যেমন একটি ঠান্ডা কাঁচের পাত্রে যদি হটাৎ করে গরম জল ডালা হয় তাহলে দেখবেন যে কাঁচের পত্রটি ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। ঠিক একই ভাবে চন্দ্রযান 3 যখন চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে সেই সময় এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
* যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার সমস্যা:- চাঁদের দক্ষিণ অংশে সূর্যের আলো পড়েনা ফলে সবসময় অন্ধকার থাকার কারণে সেখানে যখন চন্দ্রযান 3 পৌঁছবে তখন সেখানে অন্ধকার রাত্রি থাকার কারণে সোলার প্যানেল কজ করতে পারবেনা। সূর্যের আলো না থাকলে সোলার প্যানেল কাজ করতে পারবেনা ফলে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
আপনারা নিশ্চয়ই বুজতে পারবেন যে চন্দ্রযান 3 চাঁদের বুকে অবতরণ করতে কত রকমের সমস্যার সামনে হতে হবে। তবে এত গুলি সমস্যা থাকলেও চন্দ্রযান 3 কে চাঁদের মাটিতে সফট লান্ডিং করানোর জন্য ISRO (Indian Space Research Organisation) অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্য়াবহার করা হয়েছে। সুতরাং এবার চন্দ্রযান 3 চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে ল্যান্ড করানোর জন্য বিভিন্ন রকমের প্রচেষ্টা করা হয়েছে।
উপরিউক্ত অনেক সমস্যা থাকা সত্তেও চন্দ্রযান 3 সফল ভাবে ল্যান্ড করবে চাঁদের মাটিতে তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
প্রথমত- ISRO চন্দ্রযান 3 কে ল্যান্ড করার জন্য চাঁদের দক্ষিণ অংশে এমন একটি স্থান বেছে নিয়েছে যেখানে তাপমাত্রা অনন্য স্থানের তুলনায় কম ও সেখানে গর্ত অন্য স্থানের তুলনায় অনেক কম। আগের চন্দ্রযান 2 এর স্থানের থেকে এবার চন্দ্রযান 3 এর স্থানটি অনেক অংশে ভাল।
দ্বিতীয়- 14 July 2023 চন্দ্রযান 3 রকেট টিকে লঞ্চ করা হয়। এই রকেটটি 5 বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে মাক্সিমান গতিশক্তি প্রাপ্ত করে চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে প্রবেশ করবে। রকেটটি 5 বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে মাক্সিমান গতিশক্তি বাড়িয়ে নেওয়ার ফলে রকেট এর ফিউল কিন্তু কম পরিমাণে ফুরবে। অতিরিক্ত যে ফিউলটি বচবে সেই ফিউল চন্দ্রযানটিকে ল্যান্ড করার সময় Tharster এর কাছে ব্য়াবহার করা হবে যাতে ল্যান্ডার টিকে সফট লান্ডিং করানো সম্ভব হয়।
তৃতীয়- যখন লান্ডিংএর সময় হবে সেই সময়ের জন্যও ISRO একটি Unique প্ল্যান করে রেখেছে চন্দ্রযান 3 চাঁদের বুকে সরাসরি ল্যান্ড করবেনা কারণ সরাসরি ল্যান্ড করলে Threster এর প্রভাবে যে ধুলোবালি উড়বে তাতে সেনসার গুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই জন্য চাঁদে ল্যান্ড করার আগে চাঁদকে কয়েক বার প্রদক্ষিণ করে নিবে যাতে সঠিক স্থানটি খুজতে পারে ও সফট লান্ডিং করতে পারে।
চতুর্থ- যোগাযোগ ব্য়াবস্থা যদি বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায় সেই জন্য একটি রোভার ব্য়াবহার করা হয়েছে। চাঁদের মাটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ল্যান্ডার কিন্তু নিজে ঘুরবেনা এর জন্য ল্যান্ডার থেকে রোভার বেরহয়ে সেটা নেযেই পর্যবেক্ষণ করবে। ফলে ল্যান্ডার রোদে দাড়িয়ে থাকবে, রোদে থাকার কারণে সৌরপ্যানেল ভাল ভাবে কাজ করবে।
সৌরপ্যানেল ভাল কাজ করলে ইলেক্ট্রিক উৎপাদন করবে এবং পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হবে। ল্যান্ডার থেকে রোভার বেরিয়ে এসে তার সেনসারের মাধ্যমে চাঁদের মাটি জল ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষা বিভিন্ন তথ্য রোভার থেকে ল্যান্ডারে এবং ল্যান্ডার থেকে ISRO এর হেড কুয়াটারে পাঠানো হবে। ফলে ল্যান্ডারটি এক স্থানে দাড়িয়ে থাকবে এবং রোভার চাঁদের দক্ষিণ মেরুর বিভিন্ন তথ্য ISRO এর হেড কয়াটারে পাঠাতে থাকবে।